ওয়েব ডেস্ক: সারাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়ে না। করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই অবস্থা বর্তমানে আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দলটির ভ্যানগার্ডখ্যাত ঢাকা মহানগর শাখাও ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। নগরের গত দুই কমিটিই সঠিকভাবে সংগঠন গোছাতে পারেনি। যে কারণে দিন দিনে ফুটে উঠছে সাংগঠনিক দুর্বলতা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, রমনা ও বংশাল থানার সাংগঠনিক কার্যক্রম বেশ নিষ্ক্রিয়। দলীয় কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী নেতারা অংশ নেন না। ডেমরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন জায়গায় ১০-১৫ বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এমন কিছু অসঙ্গতি সামনে নিয়ে থানা ও ওয়ার্ডে নতুন কমিটি করতে গেলেও বিপাকে পড়বেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কারণ স্থানীয় এমপিরা চান মাইম্যান (নিজের লোক)। দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তা-ই চান। ভেতরে ভেতরে সাবেকদেরও আছে নানা সমীকরণ।
একই অবস্থা ঢাকা মহানগর উত্তরেও। গত কমিটির অনেকে নগরে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সাবেক সভাপতি-সম্পাদকদের অনুসারী নেতারাও আসেন না কর্মসূচিতে। থেমে নেই হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের দৌরাত্ম্য। নেতাদের ঘিরে রেখেছে সুসময়ের কোকিলরা।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৯ বছর পর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর। এর চার বছরের মাথায় ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগরকে দুই ভাগ করে কমিটি করে আওয়ামী লীগ। উত্তরে একেএম রহমতুল্লাহ-সাদেক খান ও দক্ষিণে আবুল হাসনাত-শাহে আলম মুরাদ নেতৃত্বে আসেন। বিভক্ত নগর কমিটি সংগঠনকে চাঙ্গা করবেন, এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে ঠিকমতো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি তারা। যেসব জায়গায় করেছেন, সেগুলো নিয়েও ছিল বেশ বিতর্ক।
এরপর ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনে ফের নতুন কমিটি করে দেয়া হয়। নেতৃত্বে আসেন উত্তরে বজলুর রহমান ও এসএম মান্নান কচি এবং দক্ষিণে আবু আহমেদ মন্নাফী-হুমায়ুন কবির। এখন পর্যন্ত কোনো ওয়ার্ড-থানায় কমিটি দিতে পারেনি এ কমিটি। দফায় দফায় করোনা তাদের গৃহবন্দি করে রেখেছে। ঢাকা মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থানা সভাপতি-সম্পাদকদের পদায়ন করায় সে পদগুলো শূন্য হয়ে গেছে, তাও পূরণ করা যায়নি।
চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর শাখাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘দলের গঠণতন্ত্রের ৩৫ (১) ধারা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটি, পরবর্তী তিন মাসে ওয়ার্ড এবং তার পরের তিন মাসে থানা কমিটি গঠন করতে হবে৷’
এরপর ছয় মাস পার হয়েছে, কোনো কমিটিই হয়নি। এ নিয়ে কোনো প্রস্তুতিও চোখে পড়েনি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘দেশে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। আমাদের কমিটি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এরই মধ্যে করোনা চলে এসেছে। কেমনে কাজ করবো? মানুষ জীবন ও জীবিকা নিয়ে তো আগে লড়াই করবে। এ অবস্থায় তো কেউ সাংগঠনিক কাজ করবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব কমিটিই হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান বলেন, ‘দায়িত্ব পাওয়ার পর থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করতে পারিনি। অল্প কদিন পরই চলে আসছে করোনা। এবারই আমরা প্রথম ইউনিটগুলোকে নগরের তত্ত্বাবধানে তৈরি করছি। সদস্য সংগ্রহ, নবায়ন ও কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ইউনিটগুলোকে সমৃদ্ধ করে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করবো। ইতোমধ্যে সদস্যপদ নবায়নের কর্মসূচি তদারকি করতে ২৬টি টিম করেছি। তারা কাজ করছেন। লকডাউন উঠে গেলে আমরা সম্মেলন করে থানা-ওয়ার্ড কমিটি করতে পারবো।’
পদ শূন্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা মহানগরের কমিটিতে চলে আসছেন, থানায় তাদের পদটি খালি হয়ে গেছে। যেহেতু কোথাও কমিটি নেই, কাউকে ভারপ্রাপ্তও দেয়া যাচ্ছে না। নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত তিনি যথারীতি দায়িত্ব পালন করবেন। তবে দুটো পদ তিনি ব্যবহার ও পরিচয় দিতে পারবেন না।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘কমিটি গঠনে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। কাজও শুরু করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমাদের বিরুদ্ধে। যখনই কাজে হাত দেই, তখনই করোনার প্রকোপ বেড়ে যায়। আর বলতে হয় কাজ স্থগিত করেন।’
তিনি বলেন, ‘মহানগরে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা কিছুটা আছে। এ হতাশা কাটানোর জন্য আমরা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। একটা সময় ছিল যে, বায়োডাটা দেখে সভাপতি-সম্পাদক পদে নাম ঘোষণা করা হতো, বাদ বাকি নিচের কমিটি করা হয়নি। যে কারণে ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ-পদবি পাননি।’
‘আমরা চাই, ওপেন সম্মেলনে কমিটি গঠন হবে। কমিটি গঠন করে সভাপতি-সম্পাদকের ওপর পুরো দায়িত্ব ৫-৭ বছর না রেখে, সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে। তাতে সবাই পদ পাবে, পরিচয় পাবে’ যোগ করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।
সূত্র:জাগো নিউজ